পাকিস্তানকে সমর্থনের হাল কি হয় টের পাচ্ছে তুরস্ক, এখন কাকুতি মিনতির পথে হাঁটছে তারা



**ভূমিকা**  

বিশ্ব রাজনীতিতে মিত্রতা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল, যা ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকট ও আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। পাকিস্তানকে অতীতের মতো অন্ধ সমর্থন দেওয়ার বদলে তুরস্ক এখন নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে, যা অনেক বিশ্লেষককে বলতে বাধ্য করছে—**"পাকিস্তানকে সমর্থনের হাল কি হয় টের পাচ্ছে তুরস্ক, এখন কাকুতি মিনতির পথে হাঁটছে তারা।"**  


এই নিবন্ধে আমরা তুরস্ক-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা, এবং কেন তুরস্ক এখন পাকিস্তানের প্রতি তার সমর্থন হ্রাস করছে তা বিশ্লেষণ করব।  




**তুরস্ক-পাকিস্তান সম্পর্কের ঐতিহাসিক পটভূমি**  


**১. ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধন**  

তুরস্ক (ঐতিহাসিকভাবে অটোমান সাম্রাজ্য) ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি গভীর ধর্মীয় সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, এবং ইসলামিক ঐক্যের ভিত্তিতে তাদের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ অটোমান খিলাফতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন, যা তুরস্কের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছিল।  


 **২. কৌশলগত ও সামরিক সহযোগিতা**  

তুরস্ক ও পাকিস্তান উভয়েই ন্যাটো (তুরস্ক) এবং মার্কিন মিত্র (পাকিস্তান) হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে গভীর সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশই যৌথ সামরিক演习, অস্ত্র ব্যবসা, এবং প্রতিরক্ষা চুক্তিতে জড়িত। তুরস্কের বিখ্যাত Bayraktar ড্রোন পাকিস্তানকে রপ্তানি করা হয়েছে, যা তাদের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি উদাহরণ।  


 **৩. কাশ্মীর ইস্যুতে তুরস্কের সমর্থন**  

ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু কাশ্মীর নিয়ে তুরস্ক ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালে ভারতের দ্বারা জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর তুরস্ক পাকিস্তানের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানায়, যা ভারত-তুরস্ক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে।  




 **তুরস্কের পাকিস্তান সমর্থনে পরিবর্তনের কারণ**  


**১. তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট ও নতুন কূটনৈতিক কৌশল**  

তুরস্ক বর্তমানে গভীর অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। লিরার অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, এবং বৈদেশিক ঋণের চাপে এরদোয়ান সরকারকে নতুন অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল নিতে বাধ্য করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, তুরস্ক এখন এমন দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে যারা বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে পারে। পাকিস্তান নিজেই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাই তুরস্কের জন্য এটি এখন আগের মতো অগ্রাধিকার নয়।  


**২. ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা**  

তুরস্ক বুঝতে পেরেছে যে ভারত একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি এবং এর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ভারতের বিশাল বাজার, প্রতিরক্ষা খাতের সম্ভাবনা, এবং জি২০-এর মতো ফোরামে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব তুরস্ককে পাকিস্তানের প্রতি অতীতের সমর্থন পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে।  


**৩. আঞ্চলিক রাজনীতিতে পরিবর্তন**  

মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তি ভারসাম্য পরিবর্তন হচ্ছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), এবং ইসরায়েলের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে পাকিস্তানের প্রতি একতরফা সমর্থন কমেছে। তুরস্ক এখন আরব বিশ্বের সাথে সম্পর্ক মেরামত করতে চাইছে, যেখানে পাকিস্তানের কিছু নীতি (যেমন ইমরান খানের সৌদি-বিরোধী বক্তব্য) তুরস্কের জন্য অসুবিধা তৈরি করেছিল।  


**৪. পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা**  

পাকিস্তান বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সেনা-সরকারের টানাপোড়েন, এবং অর্থনৈতিক পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তুরস্কের মতো একটি দেশ, যেটি নিজেই সংকটে আছে, সে এমন একটি অস্থিতিশীল মিত্রের পেছনে বেশি বিনিয়োগ করতে চাইবে না।  




**তুরস্কের "কাকুতি মিনতি" নীতি: কী বলছে বিশ্লেষকরা?**  


**১. পাকিস্তানকে সাহায্য কমিয়ে আনা**  

তুরস্ক এখন পাকিস্তানকে আগের মতো আর্থিক ও কূটনৈতিক সাহায্য দিচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটে তুরস্ক উল্লেখযোগ্য সহায়তা করেনি, যা অতীতে সাধারণ ঘটনা ছিল।  


 **২. ভারত ও ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক জোরদার**  

তুরস্ক এখন ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এছাড়াও, ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সংযোগ বৃদ্ধি করতে চাইছে, যা পাকিস্তানের জন্য অস্বস্তিকর।  


 **৩. ইসলামিক জোটের পরিবর্তে বহুপাক্ষিক কূটনীতি**  

এরদোয়ান সরকার এখন শুধু ইসলামিক দেশগুলোর উপর নির্ভর না করে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এটি পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ধাক্কা, কারণ তারা তুরস্ককে ইসলামিক বিশ্বের নেতা হিসেবে দেখতে চেয়েছিল।  




**পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া**  


পাকিস্তান তুরস্কের এই পরিবর্তিত নীতিতে হতাশ। তারা আশা করেছিল যে তুরস্ক কাশ্মীর ও অন্যান্য ইস্যুতে তাদের পাশে থাকবে, কিন্তু এখন তুরস্ক নিজের স্বার্থে ভারত ও অন্যান্য শক্তির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যস্ত। পাকিস্তানি মিডিয়া ও রাজনীতিবিদরা তুরস্কের এই অবস্থানকে "বিশ্বাসঘাতকতা" বলে সমালোচনা করছেন।  




**ভবিষ্যত সম্ভাবনা**  


তুরস্ক-পাকিস্তান সম্পর্ক আগের মতো থাকবে না, তবে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নও হবে না। তুরস্ক কৌশলগত কারণে পাকিস্তানের সাথে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বজায় রাখবে, কিন্তু তা সীমিত পর্যায়ে। অন্যদিকে, পাকিস্তানকে এখন চীন, সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশের দিকে বেশি ঝুঁকতে হবে।  




**উপসংহার**  


তুরস্কের পাকিস্তান-সমর্থন নীতি পরিবর্তন আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি বাস্তবতা। অর্থনীতি, কূটনীতি ও আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যের কারণে তুরস্ক এখন পাকিস্তানের প্রতি "কাকুতি মিনতি" নীতি গ্রহণ করছে। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শুধু ধর্ম বা সংস্কৃতি নয়, জাতীয় স্বার্থই প্রধান নিয়ামক। পাকিস্তানকে এখন নতুন করে নিজের কূটনৈতিক কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হবে, কারণ তার ঐতিহ্য

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন