🏷️ ISI Mark: ৭৭৮ পণ্য নিয়ে কেন্দ্রের নয়া নির্দেশ...! রফতানি, বিক্রি সব বন্ধ, যদি না থাকে একটি চিহ্ন

🧭 ভূমিকা: কেন এত শোরগোল?

কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি একটি বড়সড় নির্দেশ জারি করেছে—৭৭৮ ধরনের পণ্য এখন থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ISI Mark ছাড়া বিক্রি, আমদানি বা রফতানি করা যাবে না। এই নির্দেশ কার্যকর না করলে ব্যবসায়ীদের গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা, এমনকি হতে পারে জেলও।

দেশজুড়ে ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও রফতানিকারক মহলে এই খবর চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। কেননা, ISI Mark মানেই কড়া মান নিয়ন্ত্রণ, যা ছাড়া ওই পণ্যগুলো বাজারে আনতে বড় সমস্যায় পড়বেন অনেকেই।

🏭 ISI Mark আসলে কী?

ISI Mark হল ভারতের এক সরকারি মানচিহ্ন, যা Bureau of Indian Standards (BIS) দ্বারা প্রদান করা হয়।

ISI মানে Indian Standards Institute।
এই চিহ্ন প্রমাণ করে যে পণ্যটি BIS-এর নির্ধারিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়েছে।
যেমন: বৈদ্যুতিক যন্ত্র, কনজিউমার গুডস, ইস্পাত, প্লাস্টিক, খাবারদাবার ইত্যাদিতে এই চিহ্ন দেখা যায়।

ISI Mark মূলত গ্রাহকের কাছে সেই আশ্বাস—পণ্যটি মানসম্মত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য।

📜 নতুন নির্দেশ কী বলছে?

কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী:

৭৭৮ ধরনের পণ্য ISI Mark ছাড়া বিক্রি করা যাবে না।
এই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে: ইলেকট্রিক কেবল, হেলমেট, প্রেসার কুকার, ইস্পাতের তৈরি জিনিস, কিছু রাসায়নিক দ্রব্য, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, হোম অ্যাপ্লায়ান্স, শিশুদের খেলনা, পানীয় জল বোতল ইত্যাদি।
এই নিয়ম দেশের বাজারের জন্যও, রফতানির ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক।
BIS-এর অনুমোদন ও লাইসেন্স ছাড়া উৎপাদন, আমদানি বা রফতানি করলে শাস্তি হবে।

🧐 কেন এই নির্দেশ?

নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে সরাতে।
ভোক্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে।
রফতানির গুণগত মান বাড়াতে, যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের পণ্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়।
নকল বা ভেজাল পণ্য প্রতিরোধ করতে।

🛠️ কোন কোন পণ্যে বাধ্যতামূলক?

৭৭৮ পণ্যের তালিকায় যেমন:

বৈদ্যুতিক পাখা, ওয়াটার হিটার, গিজার, কেবল
এলইডি বাল্ব, টিউব লাইট
শিশুদের খেলনা
চাপের কুকার
হেলমেট
পানীয় জলের বোতল
স্টিলের বার, রড, শিট
কিছু রাসায়নিক দ্রব্য
কিছু খাদ্যপণ্য (যেমন দুধ পাউডার, প্যাকেটজাত খাদ্য)

📦 ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের জন্য এর অর্থ কী?

নতুনভাবে BIS লাইসেন্স নিতে হবে।
মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার খরচ বাড়বে।
উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে।
অননুমোদিত উৎপাদনকারীরা বিপদে পড়বেন—শাস্তি ও জরিমানার ঝুঁকি।

🧑‍🤝‍🧑 গ্রাহকের জন্য সুবিধা কী?

মানসম্মত ও নিরাপদ পণ্য হাতে পাবেন।
দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে।
টেকসই পণ্য ব্যবহারে খরচ কমবে।
আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা করে কেনাকাটার সুবিধা।

🔍 নকল ISI Mark চেনার উপায়

নকল ISI Mark দেখতে আসল চিহ্নের মতো হলেও কিছু পার্থক্য থাকে:

প্রতিটি আসল ISI Mark-এ থাকে ৭ অঙ্কের লাইসেন্স নম্বর (CM/L- XXXXXXX)।
নির্দিষ্ট পণ্যের মানক নম্বর (যেমন IS: XXX) উল্লেখ থাকে।
BIS ওয়েবসাইটে সেই নম্বর যাচাই করা যায়।

🏭 কীভাবে পাবেন আসল ISI Mark?

উৎপাদক বা আমদানিকারককে করতে হবে:

BIS-এ আবেদন।
পণ্যের ল্যাব টেস্ট।
পরিদর্শন ও মান যাচাই।
লাইসেন্স পাওয়ার পর পণ্য/প্যাকেটে ISI Mark ব্যবহার।

⚖️ আইন ও জরিমানা

BIS Act, 2016 অনুযায়ী:

নির্দেশ অমান্য করলে ২ বছর পর্যন্ত জেল বা ₹২ লাখ পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয়ই হতে পারে।
পুনরাবৃত্তি করলে শাস্তি বাড়বে।

📈 রফতানি ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব

মান নিয়ন্ত্রণে গুণমান বাড়বে।
বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বাড়বে।
ভারতীয় ব্র্যান্ডের ইমেজ শক্তিশালী হবে।

🏠 দেশীয় শিল্পের চ্যালেঞ্জ

ছোট উৎপাদকদের জন্য লাইসেন্স নেওয়ার খরচ।
প্রক্রিয়া ও নথিপত্রের জটিলতা।
নতুন মেশিনারি বা প্রযুক্তির প্রয়োজন হতে পারে।

🗣 বিশেষজ্ঞদের মতামত

🩺 প্রফেসর রাহুল চক্রবর্তী, শিল্প বিশেষজ্ঞ বলেন:
“নিয়ম জটিল মনে হলেও, এটি দেশের শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভালো। মানসম্পন্ন পণ্য রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়বে।”

📜 সরকারের বক্তব্য

“গ্রাহক সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যই এই পদক্ষেপ,” বলেছেন বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তা।
উৎপাদকদের জন্য কিছু প্রণোদনা ও সহজীকরণের কথাও ভাবা হচ্ছে।

✅ উপসংহার: আসলেই কি দরকার?

অবশ্যই দরকার! কারণ নিম্নমানের পণ্য শুধু ভোক্তার ক্ষতি নয়, দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট করে।
ISI Mark বাধ্যতামূলক হলে বাজারে ভেজাল কমবে, নিরাপত্তা বাড়বে।
চ্যালেঞ্জ আছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে লাভ বেশি।

✍️ শেষ কথা

দেশজুড়ে ৭৭৮ পণ্যে ISI Mark বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এতে ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের কিছুটা ঝামেলা বাড়বে, কিন্তু দেশবাসীর জন্য আসবে গুণমানের নিশ্চয়তা। আর তাই এখন শুধু একটাই কথা—“ISI Mark থাকলে তবেই নিরাপদ”!