আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা:

 

 

🧭 **ভূমিকা: শহরের বুকে নতুন বিপদের ঘণ্টাধ্বনি**

কলকাতা—ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য আর বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু এই শহরেই সম্প্রতি ভাঙল এক অস্বস্তিকর রেকর্ড। স্বাস্থ্য দপ্তরের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত তিন বছরে কলকাতায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণের সংখ্যা এক লাফে বেড়েছে। দেশের ম্যালেরিয়া মানচিত্রে কলকাতা উঠে এসেছে উদ্বেগজনক এক 'স্থানে'।

কেন হঠাৎ এমন বাড়ল সংক্রমণ? কোথায় ঘাটতি রইল? কী পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন? চলুন, খুঁটিয়ে দেখি কলকাতার ম্যালেরিয়া রিপোর্ট কার্ড ও তার পেছনের কারণগুলো।

📊 **কলকাতায় ম্যালেরিয়ার বর্তমান চিত্র: সংখ্যার ভাষায় বাস্তবতা**

* স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে কলকাতায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা গত তিন বছরের তুলনায় সর্বাধিক।

* ২০২২ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২,৩০০; ২০২৩ সালে তা কমে ১,৯০০-এ নেমে আসে।

* কিন্তু ২০২৫ সালের প্রথম ছ’মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২,৮০০! অর্থাৎ বছরের বাকি সময়ে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

* কলকাতা পৌরসংস্থার (KMC) ১৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ৪৩টিতে বেশি সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

* দেশের শহরভিত্তিক পরিসংখ্যানে কলকাতা উঠে এসেছে **তৃতীয় স্থানে**, যা চিন্তার বিষয়।

🧬 **রিপোর্ট কার্ড কী বলছে?**

* কলকাতায় মূলত *Plasmodium vivax* ও *Plasmodium falciparum* দুই প্রকারের পরজীবীই ম্যালেরিয়ার কারণ।

* শহরের কিছু বস্তি এলাকা ও জলাবদ্ধ অংশে সংক্রমণের হার সবথেকে বেশি।

* গ্রীষ্ম ও বর্ষায় (মে থেকে সেপ্টেম্বর) আক্রান্তের সংখ্যা তুঙ্গে ওঠে।

* লকডাউন-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা শিথিল হওয়াতেও সংক্রমণ বেড়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

🧪 **বিশেষজ্ঞের মতামত: কেন বাড়ছে সংক্রমণ?**

> 🩺 **ড. সৌরভ দত্ত**, ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক বলেন:

> “প্রথমত, জলাবদ্ধতা ও নালা-নর্দমা পরিষ্কারে ঘাটতি; দ্বিতীয়ত, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব। তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনও এই বৃদ্ধির বড় কারণ।”

* কলকাতায় গড় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত।

* মশক নিয়ন্ত্রণে পৌরসংস্থার কর্মীসংখ্যা ও স্প্রে কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা।

* কনস্ট্রাকশন সাইট ও ফ্ল্যাট কমপ্লেক্সে জমে থাকা জল।

🏘 **কোন এলাকায় সংক্রমণ বেশি?**

কলকাতা পৌরসংস্থার রিপোর্টে যেসব ওয়ার্ড ও এলাকা 'হাই রিস্ক' হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে:

* তিলজলা, পার্ক সার্কাস, গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর, বড়বাজার, মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি, কাশীপুর।

* দমদম, বেহালা, যাদবপুরের কিছু অংশও লাল তালিকায়।

 🏥 **চিকিৎসা ও প্রতিরোধ: সরকারি উদ্যোগ**

KMC ও রাজ্য সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ:

* ম্যালেরিয়ার বিনামূল্যে পরীক্ষা ও ওষুধ বিতরণ।

* ওয়ার্ডভিত্তিক মশা নিধন কর্মসূচি।

* রাত ও দিনে ফগিং।

* ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ম্যালেরিয়া কর্মীদের বিশেষ তদারকি।

তবে জনসংখ্যার তুলনায় কর্মী ও যন্ত্রপাতির অভাব বড় চ্যালেঞ্জ।

🧰 **আপনাকে কী করতে হবে?**

* জমা জল জমতে না দেওয়া।

* মশারি ব্যবহার।

* সন্ধ্যা ও সকালে পূর্ণ আকাশ ঢেকে জামাকাপড় পরা।

* জ্বর হলে দেরি না করে সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করা।

🌧 **বর্ষায় কেন বাড়ে সংক্রমণ?**

বর্ষাকালে:

* নালা-ড্রেনে জল জমে যায়।

* ছোট পাত্র, ফুলদানি, এয়ার কন্ডিশনের নিচের ট্রে, রিফ্রিজারেটরের পিছনের ট্রে – সবই মশার আঁতুরঘর হয়ে ওঠে।

* তাপমাত্রা ২৫–৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আর্দ্রতা ৬০–৭০% হলে মশার বংশবৃদ্ধি সর্বাধিক হয়।

 📈 **দেশের মধ্যে কলকাতার স্থান**

নয়া রিপোর্ট অনুযায়ী:

* ভারতের শহরভিত্তিক তালিকায় দিল্লি ও মুম্বাইয়ের পরে কলকাতাই তৃতীয়।

* পূর্ব ভারতের মধ্যে কলকাতাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শহর।

* প্রতিবেশী হাওড়া, হুগলিতেও সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে।

🔍 **৩ বছরের মধ্যে কী পরিবর্তন ঘটল?**

| বছর | আক্রান্তের সংখ্যা | স্থান 

| ২০২২ | ২,৩০০ | পঞ্চম |

| ২০২৩ | ১,৯০০ | চতুর্থ |

| ২০২৫ (প্রথম ছয় মাসেই) | ২,৮০০+ | তৃতীয় |

🌡 **জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব**

বিশেষজ্ঞরা বলছেন:

* গড় বৃষ্টি বেড়েছে, অনিয়মিত হয়েছে।

* গরমকাল লম্বা হচ্ছে।

* এই পরিবর্তন মশার প্রজননের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।

⚙️ **চ্যালেঞ্জ: মশা নিয়ন্ত্রণে বাধা**

* প্রায় ১.৫ কোটি মানুষের শহরে পর্যাপ্ত কর্মী নেই।

* হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে স্প্রে পৌঁছানো কঠিন।

* বেসরকারি কনস্ট্রাকশন সাইটের নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা।

🧑‍🤝‍🧑 **নাগরিকদের ভূমিকা**

* নিজের বাড়ি ও চারপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখা।

* ছোট পাত্রে জল না রাখা।

* মশারি, রেপেলান্ট, স্প্রে ব্যবহার করা।

* প্রতিবেশীকেও সচেতন করা।

🌍 **বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত**

* শ্রীলঙ্কা ২০১৬ সালে ম্যালেরিয়া নির্মূল করেছে।

* সিঙ্গাপুরে সরকারি তদারকি ও কড়া জরিমানা সংক্রমণ অনেক কমিয়েছে।

* কলকাতায়ও যদি কঠোর আইন প্রয়োগ হয়, সংক্রমণ কমানো সম্ভব।

✅ **উপসংহার: সচেতনতাই মূল চাবিকাঠি**

কলকাতার মতো জনবহুল শহরে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ এক দিনের কাজ নয়।

সরকার, পৌরসংস্থা ও নাগরিক—সবাইকে একসঙ্গে লড়তে হবে।

শুধু সরকারি স্প্রে নয়, নিজের ঘরেও সতর্ক থাকতে হবে।

আজ সচেতন হলে, আগামী প্রজন্ম পাবে সুস্থ, ম্যালেরিয়ামুক্ত কলকাতা।

 🌿🦟📊