ভারতের প্রথম স্বদেশে নির্মিত বিমানবাহী রণতরী **আইএনএস বিক্রান্ত (INS Vikrant)** শুধু একটি যুদ্ধজাহাজ নয়, এটি ভারতের সামরিক শক্তি ও স্বনির্ভরতার প্রতীক। কিন্তু সম্প্রতি একটি অদ্ভুত ঘটনায় এই জাহাজটি আলোচনায় এসেছে—**একজন অজানা ব্যক্তি নৌবাহিনীর দপ্তরে ফোন করে জাহাজের অবস্থান জানতে চেয়েছে!**
এই ব্লগে আমরা জানব—
✔ **আইএনএস বিক্রান্ত কী এবং কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ?**
✔ **কীভাবে একজন গুপ্তচর নৌবাহিনীর দপ্তরে ফোন করে জাহাজের অবস্থান জানতে চেয়েছিল?**
✔ **নৌবাহিনী কীভাবে এই হুমকি মোকাবিলা করল?**
✔ **ভারতের জন্য আইএনএস বিক্রান্তের কৌশলগত মূল্য**
**আইএনএস বিক্রান্ত: ভারতের গর্বের প্রতীক**
**আইএনএস বিক্রান্ত** হলো ভারতের প্রথম **স্বদেশে নির্মিত বিমানবাহী রণতরী** (Indigenous Aircraft Carrier, IAC-1)। এটি **২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর** কমিশন করা হয় এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপে পরিণত হয়েছে।
**আইএনএস বিক্রান্তের বিশেষ বৈশিষ্ট্য:**
✅ **দৈর্ঘ্য:** ২৬২ মিটার (৮৬০ ফুট), **ওজন:** ৪৫,০০০ টন।
✅ **বিমান ক্ষমতা:** ৩০+টি যুদ্ধবিমান (মিগ-২৯কে, তেজস নৌ সংস্করণ, হেলিকপ্টার)।
✅ **গতি:** ২৮ নট (৫২ কিমি/ঘণ্টা)।
✅ **অস্ত্রসজ্জা:** **ব্যারাক-৮** এয়ার ডিফেন্স মিসাইল, **AK-630** CIWS (ক্লোজ-ইন ওয়েপন সিস্টেম)।
✅ **স্বদেশী প্রযুক্তি:** ৭৬% ভারতীয় উপাদান ও শ্রম ব্যবহার করে তৈরি।
**এই জাহাজটি ভারতকে ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরে কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্ব দেয়।**
**গুপ্তচরের ফোনকল: "আইএনএস বিক্রান্ত কোথায়?"**
২০২৩ সালের শেষের দিকে **ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি রিজিওনাল কমান্ড সেন্টারে** একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে। কল গ্রহণকারী অফিসারকে একজন ব্যক্তি **হিন্দিতে** প্রশ্ন করে—
> **"আইএনএস বিক্রান্ত এখন কোথায় অবস্থিত? এর পরবর্তী মিশন কী?"**
**কেন এই ফোন সন্দেহজনক ছিল?**
✔ নৌবাহিনীর **অপারেশনাল ডিটেইলস** কখনও ফোনে জানানো হয় না।
✔ কলকারীর কণ্ঠস্বর ও ভাষায় **পেশাদার গুপ্তচরের মতো সূক্ষ্মতা** ছিল না, যা আরও সন্দেহ তৈরি করে।
✔ আইএনএস বিক্রান্তের অবস্থান **গোপনীয় তথ্য** (Classified Information), যা শত্রু রাষ্ট্র বা গুপ্তচরদের আগ্রহের বিষয়।
**নৌবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ:**
1. **কল ট্রেস:** সাইবার সেল কলটির উৎস শনাক্ত করার চেষ্টা করে।
2. **প্রতিবেদন:** উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জানানো হয়।
3. **সতর্কতা:** আইএনএস বিক্রান্তের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
**পরবর্তীতে জানা যায়, কলকারী সম্ভবত একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট ছিল, যারা ভারতের সামরিক গতিবিধি নজরদারি করছিল।**
**কেন আইএনএস বিক্রান্ত শত্রুদের টার্গেট?**
**১. ভারত মহাসাগরে ভারতের আধিপত্য**
- আইএনএস বিক্রান্ত **মালাক্কা প্রণালী, হরমুজ প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে** নজরদারি বাড়ায়।
- **চীন** এরই মধ্যে **এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার Liaoning ও Shandong** মোতায়েন করেছে, তাই ভারতের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ।
**২. পাকিস্তান ও চীনের জন্য হুমকি**
- পাকিস্তানের **নৌবাহিনী দুর্বল**, কিন্তু চীনের সাথে তাদের সমঝোতা আছে।
- আইএনএস বিক্রান্ত **করাচি বন্দর বা গোয়াদার বন্দর** অবরোধ করতে পারে, যা পাকিস্তানের জন্য বিপজ্জনক।
**৩. হাইপারসনিক মিসাইলের লক্ষ্য**
- চীন **DF-21D "ক্যারিয়ার কিলার" মিসাইল** তৈরি করেছে, যা **আইএনএস বিক্রান্তকে টার্গেট** করতে পারে।
- তাই জাহাজের অবস্থান গোপন রাখা **অত্যন্ত জরুরি**।
**নৌবাহিনী কীভাবে আইএনএস বিক্রান্তকে সুরক্ষিত রাখে?**
**১. অপারেশনাল সিক্রেসি (গোপনীয়তা)**
- জাহাজের চলাচলের তথ্য **শুধুমাত্র টপ-লেভেল কমান্ডারদের জানানো হয়**।
- **AIS (Automatic Identification System)** বন্ধ রাখা হয় যাতে শত্রু ট্র্যাক না করতে পারে।
**২. এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম**
- **ব্যারাক-৮ মিসাইল** (১০০ কিমি রেঞ্জ) যেকোনো শত্রু বিমান বা মিসাইল ধ্বংস করতে পারে।
- **AK-630 গান:** প্রতি মিনিটে ৫,০০০ রাউন্ড গুলি করে ক্রুজ মিসাইল ধ্বংস করে।
**৩. সাইবার সিকিউরিটি**
- নৌবাহিনীর **সাইবার ওয়ারফেয়ার ইউনিট** হ্যাকিং বা ডেটা চুরি রোধ করে।
- গুপ্তচরদের ফোনকলের মতো ঘটনাগুলি **রিয়েল-টাইম মনিটরিং**-এর মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়।
**ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: আইএনএস বিক্রান্ত-২ ও ভারতের নৌশক্তি**
ভারত **দ্বিতীয় স্বদেশী বিমানবাহী রণতরী (IAC-2)** নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, যা **৬৫,০০০ টন** ওজনের এবং **ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এয়ারক্রাফ্ট লঞ্চ সিস্টেম (EMALS)** ব্যবহার করবে। এটি **২০২৫-৩০** সালের মধ্যে তৈরি হতে পারে।
**ভারতীয় নৌবাহিনীর লক্ষ্য:**
- **৩টি বিমানবাহী রণতরী** (INS Vikramaditya, INS Vikrant, IAC-2)।
- **প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরে** উপস্থিতি বাড়ানো।
**উপসংহার: গুপ্তচরদের ফাঁস করে দিয়ে নৌবাহিনীর সতর্কতা**
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে **আইএনএস বিক্রান্ত শুধু একটি জাহাজ নয়, এটি ভারতের নিরাপত্তা ও কৌশলগত শক্তির কেন্দ্রবিন্দু**। গুপ্তচরদের ফোনকল নৌবাহিনীর **সাইবার ও অপারেশনাল সিকিউরিটি** আরও শক্তিশালী করতে বাধ্য করেছে।
ভবিষ্যতে, আইএনএস বিক্রান্ত **ভারতকে একটি বিশ্বসেরা নৌশক্তিতে পরিণত করবে**, আর গুপ্তচরদের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন হবে—**"আইএনএস বিক্রান্ত আসলে কোথায়?"**
🇮🇳⚓