গাজায় আন্তর্জাতিক চাপে ১০০ ট্রাক ত্রাণ ঢুকতে দিল ইসরায়েল: ২১ লাখ মানুষের খিদে মিটবে কি?

 



ভূমিকা

গাজা উপত্যকা, যেখানে প্রায় ২২ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করেন, দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি অবরোধের শিকার। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যার ফলে খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় প্রতিদিন গাজায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের কথা ছিল। তবে বাস্তবতা কী? ২১ লাখ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কি?


গাজায় ত্রাণ প্রবাহ: আন্তর্জাতিক চাপে ইসরায়েলের সাড়া

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন ১৯৬টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। পরবর্তী দিনগুলোতে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৯১৫টি ট্রাকে পৌঁছেছে। তবে, যুদ্ধের আগে গাজার দৈনিক আমদানি ছিল ১০০০ ট্রাকেরও বেশি। অর্থাৎ, বর্তমানে প্রবাহিত ত্রাণের পরিমাণ আগের তুলনায় মাত্র ৬০%।


ত্রাণের ধরন ও প্রয়োজনীয়তা

প্রবাহিত ত্রাণের মধ্যে খাদ্য, পানি, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, তাঁবু ও জ্বালানি অন্তর্ভুক্ত। তবে, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় প্রতিদিন অন্তত ১০০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন। অর্থাৎ, বর্তমানে প্রবাহিত ত্রাণের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।


লুটপাট ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি

গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের লুটপাটের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে, ১০৯টি ট্রাক লুট হয়ে যায়, যার মধ্যে ৯৮টি ট্রাক খোয়া গেছে। এই ধরনের ঘটনা ত্রাণ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা বাড়াচ্ছে।






খাদ্য সংকট ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

জাতিসংঘের মতে, গাজায় খাদ্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। পানির অভাবে ডায়রিয়া, কলেরা ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালগুলোর জ্বালানি ও ওষুধের অভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।


আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ গাজায় ত্রাণ প্রবাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তবে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগ ও হামাসের সঙ্গে রাজনৈতিক জটিলতা ত্রাণ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে।


ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা

গাজার মানবিক পরিস্থিতি উন্নত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ত্রাণ প্রবাহ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি, ও অবরোধ শিথিলের মাধ্যমে গাজার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।


উপসংহার

গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবাহিত হওয়া আন্তর্জাতিক চাপের ফলস্বরূপ হলেও, এটি ২১ লাখ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকর উদ্যোগ ও ইসরায়েলের সহযোগিতা প্রয়োজন গাজার মানবিক পরিস্থিতি উন্নত করতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন