মহারণা প্রতাপ: জীবনী ও বীরত্বগাথা..




 **ভূমিকা**  

ভারতবর্ষের ইতিহাসে অমর বীর মহারণা প্রতাপ সিংহ Sisodiya (১৫৪০-১৫৯৭) ছিলেন মেবারের রাজপুত শাসক যিনি মোগল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অদম্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাঁর জীবন সংগ্রাম, ত্যাগ ও দেশপ্রেম আজও ভারতীয়দের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এই বিস্তৃত জীবনীতে আমরা মহারণা প্রতাপের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমগ্র জীবনকাহিনী বিশদভাবে আলোচনা করব।  




**অধ্যায় ১: প্রারম্ভিক জীবন ও পটভূমি**  

 **জন্ম ও বংশপরিচয়**  

- **জন্ম**: ৯ মে ১৫৪০ (জ্যৈষ্ঠ শুক্ল তৃতীয়া, বিক্রম সংবত ১৫৯৭)  

- **জন্মস্থান**: কুম্ভলগড় দুর্গ, রাজস্থান  

- **পিতা**: মহারাজা উদয় সিংহ II (মেবারের শাসক)  

- **মাতা**: রানি জয়ন্তীবাই (জলহর রাজপুত রাজকন্যা)  

- **বংশ**: Sisodiya রাজপুত (সূর্যবংশী ক্ষত্রিয়)  


 **শৈশব ও শিক্ষা**  

মহারণা প্রতাপের শৈশব কাটে রাজস্থানের Aravalli পর্বতমালায়। তিনি:  

- রাজপুত অনুযায়ী অস্ত্রচালনা, ঘোড়সওয়ারি ও যুদ্ধকৌশলে প্রশিক্ষিত হন।  

- গুরু **রামপ্রসাদ** ও **ভামাশাহ**-এর কাছ থেকে রাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি শেখেন।  

- ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনচেতা ও নির্ভীক ছিলেন।  




**অধ্যায় ২: সিংহাসনে আরোহণ ও প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ**  

**উদয় সিংহের মৃত্যু ও উত্তরাধিকার সংকট**  

১৫৭২ সালে উদয় সিংহের মৃত্যুর পর, মেবারের সিংহাসন নিয়ে বিবাদ শুরু হয়:  

- আকবর চেয়েছিলেন প্রতাপের ভাই **জগমাল**কে মেবারের রাজা করতে (যিনি মোগলদের আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন)।  

- কিন্তু রাজপুত Sardarদের সমর্থনে প্রতাপ সিংহাসনে বসেন।  


 **মোগলদের সাথে প্রথম সংঘাত**  

আকবর প্রতাপকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন, কিন্তু প্রতাপ উত্তর দেন:  

> **"মেবারের মাটি আমার মাতৃভূমি, আমি কখনও বিদেশী শক্তির কাছে মাথা নত করব না!"**  




**অধ্যায় ৩: হাল্দিঘাটির যুদ্ধ (১৫৭৬) – মহাযুদ্ধ**  

**যুদ্ধের কারণ**  

আকবর প্রতাপকে দমনের জন্য বিশাল সেনাবাহিনী পাঠান।  


 **যুদ্ধের বিবরণ**  

- **স্থান**: Haldighati (নাথদ্বারা-উদয়পুরের মধ্যে)  

- **মোগল সেনাপতি**: মান সিংহ (আম্বরের রাজা)  

- **প্রতাপের সেনা**: ২০,০০০ রাজপুত বনাম ৮০,০০০ মোগল সৈন্য  

- **ঘোড়ার নাম**: চেতক (যে যুদ্ধে প্রাণ দেয়)  


**ফলাফল**  

- যদিও মোগলরা যুদ্ধক্ষেত্র দখল করে, প্রতাপ পিছু হটেননি।  

- গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান।  




**অধ্যায় ৪: বনবাস ও সংগ্রামের বছরগুলি**  

**জঙ্গলে জীবন**  

প্রতাপ ১২ বছর Aravalli জঙ্গলে কাটান:  

- **পরিবারসহ কষ্টসহিষ্ণু জীবন**: পাতার ঘর, বন্য ফল-মূল খেয়ে বেঁচে থাকা।  

- **ভামাশাহের সাহায্য**: ধনী ব্যবসায়ী ভামাশাহ তাঁর সম্পদ দিয়ে প্রতাপের সেনাবাহিনী গঠনে সহায়তা করেন।  


 **মোগলদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ**  

প্রতাপ কখনও সরাসরি যুদ্ধে, কখনও গেরিলা কৌশলে মোগলদের ব্যতিব্যস্ত রাখেন।  




 **অধ্যায় ৫: শেষ জীবন ও মৃত্যু**  

 **মেবার পুনরুদ্ধার**  

১৫৮২ সালে **দিবেরের যুদ্ধে** প্রতাপ চিতোর ছাড়া সমগ্র মেবার মুক্ত করেন।  


 **মৃত্যু**  

১৫৯৭ সালে **৫৭ বছর** বয়সে শিকারে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।  




**অধ্যায় ৬: মহারণা প্রতাপের উত্তরাধিকার**  

**ভারতীয় ইতিহাসে স্থান**  

- **স্বাধীনতার প্রতীক**: শিবাজি, ভগৎ সিং সবাই তাঁকে আদর্শ মানেন।  

- **সাংস্কৃতিক প্রভাব**: রাজস্থানের লোকগাথা, চলচ্চিত্র  "মহারণা প্রতাপ" ধারাবাহিক)  


**মহারণা প্রতাপ জয়ন্তী**  

প্রতি বছর **জ্যৈষ্ঠ শুক্ল তৃতীয়া**তে রাজস্থানে উৎসব পালিত হয়।  




**উপসংহার**  

মহারণা প্রতাপ শুধু একজন যোদ্ধা নন, তিনি ছিলেন **আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার মূর্তপ্রতীক**। তাঁর জীবনী আমাদের শেখায়:  

> **"সত্যের পথে সংগ্রামই জীবনের সর্বোচ্চ ধর্ম।"**  


**জয় মহারণা প্রতাপ!**  



এই জীবনীতে আমরা রাজপুত বীরের সমগ্র সংগ্রামের ইতিহাস জানলাম। তাঁর আদর্শ আজও কোটি ভারতীয়ের হৃদয়ে অমর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন