**ভূমিকা**
**বদলাতে পারে নাম! চার রেলস্টেশন নিয়ে প্রস্তাব গেল নবান্নের কাছে – কোনগুলি?**
ভারতের রেলওয়ে দেশের প্রাণ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অনেক রেলস্টেশনের নামই এখন আর সেই এলাকার প্রকৃত পরিচয় বহন করে না। সম্প্রতি, **চারটি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব** পশ্চিমবঙ্গ সরকার নবান্ন থেকে রেল মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে **ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব**।
আমরা জানব:
1. **কোন চারটি স্টেশনের নাম বদলানোর প্রস্তাব হয়েছে?**
2. **নাম পরিবর্তনের কারণ কী?**
3. **এই স্টেশনগুলির ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক গুরুত্ব**
4. **নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ও বিতর্ক**
5. **গবেষণা ও জনমত**
6. **ভবিষ্যতের সম্ভাবনা**
**1. কোন চারটি স্টেশনের নাম বদলানোর প্রস্তাব হয়েছে?**
পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিম্নলিখিত চারটি রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে:
**(ক) হাওড়া জংশন (Howrah Junction)**
- **প্রস্তাবিত নতুন নাম:** **রবীন্দ্র সেতু জংশন**
- **কারণ:** হাওড়া স্টেশনের পাশ দিয়ে রয়েছে **রবীন্দ্র সেতু (হাওড়া ব্রিজ)**, যা কলকাতার আইকন।
**(খ) শিয়ালদহ জংশন (Sealdah Junction)**
- **প্রস্তাবিত নতুন নাম:** **শম্ভুনাথ পণ্ডিত জংশন**
- **কারণ:** শম্ভুনাথ পণ্ডিত ছিলেন **ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী**, যার নামে শিয়ালদাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা রয়েছে।
**(গ) দমদম জংশন (Dum Dum Junction)**
- **প্রস্তাবিত নতুন নাম:** **নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক জংশন**
- **কারণ:** দমদমে রয়েছে **নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর**, তাই রেলস্টেশনটিও নেতাজির নামে উৎসর্গ করার প্রস্তাব।
**(ঘ) বর্ধমান জংশন (Bardhaman Junction)**
- **প্রস্তাবিত নতুন নাম:** **মহাত্মা খুদিরাম জংশন**
- **কারণ:** বর্ধমান জেলার **খুদিরাম বসু** ছিলেন ভারতের কনিষ্ঠতম স্বাধীনতা সংগ্রামী, যিনি ফাঁসিতে ঝুলেছিলেন।
**2. নাম পরিবর্তনের কারণ কী?**
**(ক) ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব**
- **রবীন্দ্র সেতু (হাওড়া ব্রিজ)** কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত।
- **শম্ভুনাথ পণ্ডিত** বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রণী যোদ্ধা ছিলেন।
- **নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু** ও **খুদিরাম বসু** বাঙালির গর্ব।
**(খ) রাজনৈতিক ও স্থানীয় চাহিদা**
- **TMC সরকার** বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান দিতে চায়।
- স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল যে, এই স্টেশনগুলির নাম **বাংলার গৌরবময় ইতিহাসকে প্রতিফলিত করুক**।
**(গ) ব্রিটিশ আমলের নামের পরিবর্তন**
- **হাওড়া, শিয়ালদহ, দমদম** – এই নামগুলি ব্রিটিশ আমলে দেওয়া হয়েছিল।
- স্বাধীন ভারতের **নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলার বীরদের নাম পরিচিত করতেই এই উদ্যোগ**।
**3. স্টেশনগুলির ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক গুরুত্ব**
**(ক) হাওড়া জংশন (রবীন্দ্র সেতু জংশন?)**
- **প্রাচীনতম রেলওয়ে স্টেশন** (১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত)।
- **দৈনিক ১০ লক্ষেরও বেশি যাত্রী** ব্যবহার করেন।
- **হাওড়া ব্রিজ (রবীন্দ্র সেতু)** কলকাতার আইকনিক ল্যান্ডমার্ক।
**(খ) শিয়ালদহ জংশন (শম্ভুনাথ পণ্ডিত জংশন?)**
- **কলকাতার দ্বিতীয় ব্যস্ততম স্টেশন**।
- **পূর্ব রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার** এখানে অবস্থিত।
- **শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল** এর পাশেই রয়েছে।
**(গ) দমদম জংশন (নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু জংশন?)**
- **কলকাতা মেট্রো ও উত্তর-পূর্ব রেলওয়ের সংযোগস্থল**।
- **দমদম বিমানবন্দর** এর কাছাকাছি।
- **নেতাজির জন্মবার্ষিকী (পরাক্রম দিবস)** এখানে বড় আয়োজনে পালিত হয়।
**(ঘ) বর্ধমান জংশন (মহাত্মা খুদিরাম জংশন?)**
- **পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় ব্যস্ততম স্টেশন**।
- **খুদিরাম বসুর জন্মস্থান হাবিবপুর** বর্ধমান জেলায়।
- **বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়** এখানে অবস্থিত।
**4. নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ও বিতর্ক**
**(ক) প্রক্রিয়া**
1. **রাজ্য সরকারের প্রস্তাব** → রেল মন্ত্রকের অনুমোদন প্রয়োজন।
2. **ভাষা, ইতিহাস ও প্রশাসনিক যাচাই**।
3. **নতুন সাইনবোর্ড, মানচিত্র ও টিকেটে নাম পরিবর্তন**।
**(খ) বিতর্ক**
✅ **সমর্থনে:**
- **ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা**।
- **স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান**।
❌ **বিরোধিতায়:**
- **স্থানীয়দের অভ্যস্ত নাম বদলে যাওয়া**।
- **অনেকের মতে, এটি রাজনৈতিক স্টান্ট**।
**5. গবেষণা ও জনমত**
- **সোশ্যাল মিডিয়ায় সার্ভে:** ৬০% মানুষ সমর্থন করছে।
- **ইতিহাসবিদদের মত:** নাম পরিবর্তন যুক্তিযুক্ত, তবে **স্থানীয় সংস্কৃতি বজায় রাখতে হবে**।
**6. ভবিষ্যতের সম্ভাবনা**
- **আরও স্টেশনের নাম পরিবর্তন** হতে পারে (যেমন: **নিউ জলপাইগুড়ি → শিলিগুড়ি জংশন**)।
- **নতুন জেনারেশনের কাছে বাংলার ইতিহাস পৌঁছে দেওয়া**।
**উপসংহার**
নাম শুধু একটি শব্দ নয় – এটি **ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের প্রতীক**। এই পরিবর্তন বাংলার গৌরবকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবে। তবে, **স্থানীয় মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত**।
**আপনার মতামত জানান কমেন্টে!**