শ্রাবণ মাসে শিবের কৃপায় কী কী ভালো হয়

pavitrajyotish.com/shrav... 


🌿 ভূমিকা

শ্রাবণ মাস (সাওয়ান/জ্যৈষ্ঠ/আষাঢ়ের পরে) হিন্দু ধর্মে এক পবিত্র ও পবিত্রতম সময়। এই সময় শিবভক্তির অনন্য গুরুত্ব রয়েছে। শিবলিঙ্গে পানির অভিষেক, বেলপাত্রের পূজা, সাওয়ান সোমবারের উপবাস—এগুলি শিবের অনুগ্রহ আকর্ষণ করার আদর্শ উপায়। শাস্ত্রে বলা আছে, শ্রাবণে শিবপূজা করলে গুণতের দিকে আশীর্বাদ বর্ষিত হয়।


১. শিবের কী কী গুণ বৃদ্ধি পায়

১.১ মানসিক শান্তি

শ্রাবণ মাসে অনুশীলিত নৈমিত্তিক অভিষেক ও মন্ত্রপাঠ মনের অশান্তিকে প্রশমিত করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় ।

১.২ শারীরিক সুস্থতা ও রোগপ্রতিরোধ

মহামৃত্যুঞ্জয় বা রুদ্রমন্ত্রের জপ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে শক্তি বৃদ্ধি করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে ।

১.৩ পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ়তা

স্তবাসী তথা গ্রহনিবাসীদের জন্য অনুশীলিত রীতি (ব্যস্ত্রগত চন্দ্র) পারিবারিক সংযোগ মজবুত করে যেমন ব্রত রাখলে সংসারে শান্তি, সুখ ও সম্প্রীতি বাড়ে।


২. শ্রাবণ মাসে শিবের প্রতি শ্রদ্ধার পরম রীতি

২.১ সোমবার ব্রত

প্রতিটি সোমবার শিবলিঙ্গে জল, দুধ, বেলপাতা ও পঞ্চামৃত অর্চনা, “ওঁ নমঃ শিবায়” জপ—এগুলি শিবের করুণা কামনা করে। শাস্ত্রে বলা আছে, এই ব্রত ধরলে আংশিক মুক্তি ও ইচ্ছা পূরণে অনুগ্রহ হয় ।

২.২ রুদ্রাঅভিষেক

গঙ্গাজল, দুধ, মদ, ঘি, দই, মধু ইত্যাদি দিয়ে রুদ্রাঅভিষেক শ্রাবণে বিশেষ ফলপ্রদ।

২.৩ মন্ত্রপাঠ ও স্তোত্র

  • মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র: মৃত্যুর ভয় দূর করে

  • রুদ্র নামাবলীরুদ্র সুক্ত: শিব শক্তি আহরণ

  • শিবচালিসা পাঠ: সার্বিক কল্যাণ কামনা


৩. মিথ ও কিংবদন্তি

৩.১ সমুদ্র মন্থন ও হালাহল

সমুদ্র মন্থনের সময় ১৪ রত্নের মধ্যে হালাহল বিষ বের হয়। শিব সেই বিষ পান করে নিজের কণ্ঠে আটকে রাখেন—তিনি হন নীলকণ্ঠ, বিষ থেকে পৃথিবী বাঁচাতে (sakhashree.com)।

৩.২ পার্বতীর তপস্যা ও বিয়ের মঙ্গল

পার্বতী শ্রাবণ কার্তিকের এই মাসে কঠোর তপস্যায় বসবাস করেন। শিব তৎপর হয়ে তার প্রতি দয়া দেখিয়ে বিবাহ করেন—এ ঘটনার স্মরণে শ্রাবণ মাসে শিবের প্রতি ভক্তি ও অনুগ্রহ লাভ হয় ।

৩.৩ মার্কণ্ডেয় উপাখ্যান

মার্কণ্ডেয় নামক মেয়ে যে মৃত্যুর কুফল ভেঙে শিবের আশীর্বাদে অনন্তকালে বেঁচে যান, শ্রাবণে সেই মহামন্ত্রের জপ অর্থাৎ মহামৃত্যুঞ্জয় এর মহিমা ফুটে ওঠে।


৪. অনুশীলনের ৭টি মূল স্তম্ভ

১. প্রতিদিন সকালে স্নান → পূজা
২. রুদ্রাঅভিষেক + পঞ্চামৃত → শিবলিঙ্গে
৩. পবিত্র পানীয় ও ফুলের অর্চনা
৪. উপবাস/ফলাহার → দেহ সুস্থ রাখে
৫. রাত্রে “ওঁ নমঃ শিবায়” ও “মহামৃত্যুঞ্জয়” ঢালা
৬. পাঠ ও ব্যাখ্যায় ব্রত ও আপ্যায়ন
৭. গঙ্গাজল ও বেলপাতার প্রসাদ বিতরণ → সামাজিক সেবা


৫. শ্রাবণে বিশেষ যতিডাণ্ডা

  • রুদ্রাঅভিষেকের আহুতি সংখ্যা: ১০৮ বা ৫১০৮

  • পরিবেশন: জলের পাশাপাশি দুধ-দই, ঘি, মধু, গঙ্গাজল

  • অর্পণ উপাদান: মূলত বেলপাতা—শিবের প্রিয়

  • মন্ত্র: অন্তত ১১০০০ জপ বা ১০৮বার মহামৃত্যুঞ্জয়/ওঁ নমঃ শিবায়


৬. ফল ও আশীর্বাদ

  • আর্থিক স্থিতি: চাকরি, ব্যবসা সূচনায় উন্নতি

  • স্বাস্থ্য: রোগ প্রতিরোধ, দীর্ঘায়ু

  • মানসিক প্রশান্তি: উদ্বেগ, দুঃশ্চিন্তা দূরীকরণ

  • ব্রত ও কর্মফল: সরলতার উন্নতি, জীবনে সুষ্ঠু বিশ্বাস

  • মুক্তি: মন্দ কর্মের বন্ধন থেকে অপেক্ষাকৃত মুক্তি


৭. গল্পের সূত্রে উৎসাহ

শ্রাবণের স্মৃতি শিশুদের মুখে গল্প হয়ে, মায়ের হাতে অভিষেকের পাত্র—এতে মনের গভীরতা বাড়ে। যেমন শৈশবে লেখা অনুষঙ্গে ঋগ্বেদের বাণী ওঠে—“মঞ্জুর করুণা, শান্তি শিবের” ।


৮. উপসংহার

শ্রাবণ মাসের প্রতিটি দিন ও রীতি শিবের করুণা আকর্ষণে পথপ্রদর্শক। উপবাস, অভিষেক, মন্ত্রপাঠ, স্তোত্রপাঠ—এই সকল আচরণের পরিপূর্ণতা মানুষকে শিবলிங்கের সান্নিধ্যে নিয়ে যায়। ফলস্বরূপ কুসংকেত দূর্বল হয়ে, শান্তি, শক্তি, ভাগ্য, অভ্যাস—সবদিকেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

 🙏

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন