অজন্তা গুহা কিসের জন্য বিখ্যাত..??

 


**ভূমিকা** 

মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জেলার ইলোরা গুহা কমপ্লেক্স বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত এই গুহাগুলো হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের এক অপূর্ব সমন্বয় প্রদর্শন করে। প্রায় ৬০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি এই ৩৪টি গুহা প্রাচীন ভারতের শিল্পী ও স্থপতিদের অসাধারণ দক্ষতার সাক্ষ্য বহন করে।  


এই বিস্তৃত ব্লগে আমরা ইলোরা গুহার ইতিহাস, স্থাপত্য শৈলী, ধর্মীয় তাৎপর্য, প্রধান গুহাসমূহের বিবরণ, সংরক্ষণ প্রচেষ্টা এবং পর্যটন সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য বিশদভাবে আলোচনা করব।  



**ইলোরা গুহার ইতিহাস** 


**১. নির্মাণকাল ও ঐতিহাসিক পটভূমি**  

ইলোরা গুহাগুলি তিনটি প্রধান ধর্মীয় যুগে নির্মিত হয়েছিল:  

- **বৌদ্ধ গুহা** (৫০০-৭০০ খ্রিস্টাব্দ): গুহা নং ১-১২  

- **হিন্দু গুহা** (৬০০-৯০০ খ্রিস্টাব্দ): গুহা নং ১৩-২৯  

- **জৈন গুহা** (৮০০-১০০০ খ্রিস্টাব্দ): গুহা নং ৩০-৩৪  


**২. নির্মাণকারী রাজবংশ**  

- **রাষ্ট্রকূট রাজবংশ**: কৈলাশনাথ মন্দির (গুহা নং ১৬) নির্মাণ করেন।  

- **চালুক্য ও যশোবর্মণ**: অন্যান্য হিন্দু গুহাগুলির নির্মাতা।  

- **দিগম্বর জৈন সম্প্রদায়**: শেষের জৈন গুহাগুলি তৈরি করে।  


 **৩. আবিষ্কার ও আধুনিক ইতিহাস**  

ইলোরা গুহা স্থানীয়ভাবে সর্বদা পরিচিত ছিল, তবে ১৮শ শতাব্দীতে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদরা এটিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলেন।  




 **স্থাপত্য ও গুহার শ্রেণীবিভাগ** 


**১. বৌদ্ধ গুহা (১-১২ নং)**  

- **বিহার** (ভিক্ষুদের আবাস) ও **চৈত্য** (প্রার্থনাকক্ষ) রয়েছে।  

- গুহা নং ১০ (**বিশ্বকর্মা গুহা**): একটি চৈত্য গৃহ যার স্তূপ ও বুদ্ধমূর্তি রয়েছে।  


**২. হিন্দু গুহা (১৩-২৯ নং)**  

- **কৈলাশনাথ মন্দির (গুহা নং ১৬)**:  

  - বিশ্বের বৃহত্তম একক পাথর কেটে তৈরি স্থাপত্য।  

  - ৩২ মিটার উঁচু, ৫০ মিটার চওড়া।  

  - শিব, বিষ্ণু ও অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি।  

- **রাবণ কি খাই (গুহা নং ২৯)**:  

  - বিশাল শিবলিঙ্গ ও নৃত্যরত শিবের মূর্তি।  


 **৩. জৈন গুহা (৩০-৩৪ নং)**  

- **ইন্দ্র সভা (গুহা নং ৩২)**:  

  - তীর্থঙ্কর মহাবীর ও জৈন যক্ষিণীদের মূর্তি।  

  - সূক্ষ্ম স্তম্ভ ও খোদাইকাজ।  




 **কৈলাশনাথ মন্দির: একটি স্থাপত্য বিস্ময়** 


 **১. নির্মাণ প্রক্রিয়া**  

- **উপর থেকে নিচে** খোদাই পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি।  

- আনুমানিক **১.৫ লক্ষ টন পাথর** কেটে সরানো হয়েছিল।  

- প্রায় **১০০ বছর** সময় লেগেছিল নির্মাণে।  


 **২. স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য**  

- **গর্ভগৃহ**: শিবলিঙ্গ অবস্থিত।  

- **নন্দী মণ্ডপ**: বিশাল নন্দী (বৃষ) মূর্তি।  

- **স্তম্ভযুক্ত মণ্ডপ**: ১৬টি স্তম্ভে সজ্জিত।  


 **৩. শিল্পকর্ম**  

- **রামায়ণ-মহাভারত** এর দৃশ্যাবলী।  

- **শিবের তাণ্ডব নৃত্য** এর মূর্তি।  

- **দশাবতার** (বিষ্ণুর ১০টি অবতার) খোদাই করা।  




 **ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব** 


**১. ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক**  

- হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন গুহাগুলি পাশাপাশি অবস্থিত।  

- প্রমাণ করে যে প্রাচীন ভারতে সব ধর্ম একসাথে সহাবস্থান করত।  


**২. শিল্পকলার বিবর্তন**  

- গুপ্ত ও রাষ্ট্রকূট শিল্পরীতির মিশ্রণ।  

- ভাস্কর্যে প্রাকৃতিক ভাব ও গতিশীলতা।  




**সংরক্ষণ ও পর্যটন** 


**১. সংরক্ষণ প্রচেষ্টা**  

- **ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (ASI)** দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ।  

- পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন।  


**২. ভ্রমণের টিপস**  

- **সেরা সময়**: অক্টোবর-মার্চ।  

- **টিকিট**: ভারতীয়দের জন্য ৪০ টাকা, বিদেশীদের ৬০০ টাকা।  

- **গাইড**: স্থানীয় গাইড নেওয়া উচিত।  




 **উপসংহার** 

ইলোরা গুহা কেবল পাথরের গুহার সমষ্টি নয়, এটি প্রাচীন ভারতের বহুত্ববাদী সংস্কৃতি, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং স্থাপত্য কৌশলের এক জীবন্ত নিদর্শন। কৈলাশনাথ মন্দিরের মতো অকল্পনীয় স্থাপত্য বিশ্বকে আজও বিস্মিত করে। এই ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের মহান ইতিহাস জানতে পারে।  


**ইলোরা শুধু একটি পর্যটন স্থান নয়, এটি ভারতীয় সভ্যতার গর্বের প্রতীক।**  



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন